লাচিত বরফুকন রচনা বাংলা – Lachit Borphukan Bengali Essay
লাচিত বরফুকন, সম্পূর্ণ নাম – চাও লাচিত ফুকন, ছিলেন আহোম সাম্রাজ্যের সাহসী ও পরাক্রমী সেনাপতি। ১৬৬৯ সালে তিনি আহোম সেনার মাধ্যমে বিশাল মোগল সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন এবং মোগল সাম্রাজ্যকে চিরকালের জন্য আসাম থেকে দূরে ঠেলে দেন। শরাইঘাটের যুদ্ধের কারণে লাচিত বরফুকনের নাম আসামের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। প্রতি বছর ২৪ নভেম্বর আসামে লাচিত দিবস পালন করে তাঁর বীরত্বের প্রতি সম্মান জানানো হয়।
লাচিত বরফুকন রচনা বাংলা: একটি মহান ইতিহাস
লাচিত বরফুকনের পিতা আহোম বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন। 1671 সালে সরাইঘাটের যুদ্ধে লছিতের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। তিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অনেক বিখ্যাত ছিলেন। লাচিত বরফুকন ছিলেন আহোম সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি, সেই সময়ে আহোম রাজা ছিলেন প্রতাব সিংহ।
লাচিত বরফুকন রচনা বাংলা / Lachit Borphukan Essay in Bengali
- আমরা আসুন দেখি, আহম বীর লাচিত বরফুকনের ইতিহাস আমাদের পাঠ্যসূচিতে কিভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে! আসামের তথা ভারতের ইতিহাসে ১৬৭১ সালে হিন্দুরা মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল, যেটি আজকে সিরাইঘাটের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এর নায়ক ছিলেন সাহসী অসমিয়া মুক্তিযোদ্ধা, “লাচিত বরফুকন”।
- মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভারতের হিন্দু উপজাতিদের গৌরবগাথাগুলি ভারতের ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ১৬৫৮ সালে ভারতের শেহেনশাহ ছিলেন জেহাদি ‘আওরঙ্গজেব’। আর সেই সময়ে আসামে রাজত্ব করছিলেন হিন্দু রাজা “জয়ধ্বজ সিংহ”।
- ১৬৬১ সালে আওরঙ্গজেব বাংলা সুবে মীর জুমলা খানকে আসাম অধিকার করার নির্দেশ দেন। মীর জুমলা আসামের রাজধানী “গড়গাঁও” অধিকার করে নিলেও, জয়ধ্বজ সিংহ গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করে মুঘলদের অতিষ্ঠ করে তুলছিলেন, ফলে মুঘলরা ১৬৬৩ সালে ‘ঘিলাঝারিঘাটের সন্ধি’ করতে বাধ্য হয়।… জয়ধ্বজ সিংহের মৃত্যুর পর মুঘল ফৌজদার “ফিরুজ খান” গুয়াহাটি অধিকার করে নেয়।
- আসামের সিংহাসনে বসেন জয়ধ্বজ সিংহের কাকাতো ভাই “চক্রধ্বজ সিংহ”। তিনিই লাচিত বরফুকনকে আসাম সেনার সেনাপতি নিযুক্ত করেন। সেপ্টেম্বর ১৬৬৭ সালে মন্ত্রী “আতন বরগোহাই”কে সঙ্গে নিয়ে লাচিত বরফুকনের নেতৃত্বে অহম সেনা গুয়াহাটি পুনরুদ্ধার করতে ব্রহ্মপুত্র নদীপথে ‘আপার আসাম’ থেকে নেমে আসেন। দুই মাসের যুদ্ধের পর ৪ নভেম্বর ১৬৬৭ সালে আসাম সেনা গুয়াহাটি আবার উদ্ধার করে।
- ১৯ নভেম্বর ১৬৬৭ সালে আওরঙ্গজেব আম্বেরের চার হাজারি মনসবদার রাম সিং কে আসাম আক্রমণ করতে পাঠান। ফেব্রুয়ারি মাসে রাম সিং আসলে মুঘল সেনায় ছিল ৪০০০ গেরিলা সৈন্য, ১৫০০ আহাদি এবং ৫০০ বরকন্দাজ।
- এছাড়া কোচবিহারের রাজা “মদন নারায়ণ” এই যুদ্ধে মুঘলদের পক্ষ থেকে যোগদান করে প্রায় ১০ হাজার কোচ সৈন্য পাঠান। ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সেরা সেনাপতি লাচিত বরফুকন জানতেন, মুঘল ও কোচ সেনাকে ধ্বংস করার জন্য প্রথমে ব্রহ্মপুত্র নদীপথে ঢুকে আসতে হবে।
- মুঘলরা নৌযুদ্ধে পারদর্শী ছিল না, তাই তিনি সেখানেই মুঘল সেনাকে আটকাতে গেরিলা যুদ্ধ এবং নদীবক্ষে নৌ সমরসজ্জায় মনোনিবেশ করেন। ১৬৬৯ সালের এপ্রিল মাসে মুঘল সেনা আসামে প্রবেশ করে।
- শুরুতে স্থল যুদ্ধে পারদর্শী মুঘল সেনা লাচিতের অহম সেনার প্রতিরোধ ভেঙ্গে দেয়। লাচিত গুয়াহাটি রক্ষা করার আদেশ দেন। আসামের প্রতিটি মানুষ শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত গুয়াহাটি ও কামরূপ মুসলিমদের হাতে তুলে দিতে চায়নি।
- মুঘল ও কোচ সেনা চারদিক থেকে আক্রমণের পরিকল্পনা করে। অহম সেনা দুই দলে ভাগ হয়ে লাচিত এবং আতন এর নেতৃত্বে লড়াই চালিয়ে যায়।
- ১৬৬৯ এর জুন মাস নাগাদ মেঘালয়ের “জৈনটিয়া”, “গারো” উপজাতিরা এবং দরং-এর রানী অহম সেনার সঙ্গে যোগ দেয়। ছয় মাস ধরে মারাত্মক যুদ্ধ চললেও মুঘল সেনা গুয়াহাটি দখল করতে পারেনি।
- আওরঙ্গজেব বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খানকে রাম সিং কে সাহায্য করার জন্য পাঠান। রাম সিং লাচিতকে একলক্ষ টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন বলে গুজব ছড়ান। কিন্তু লাচিত বরফুকন রাজাকে এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে দেননি। তিনি দেশের প্রতি প্রেমে অটল ছিলেন।
- ৫ আগস্ট ১৬৬৯ সালে আলাবই পাহাড়ের পাদদেশে ৪০ হাজার মুঘল সৈন্যের বিরুদ্ধে ২০ হাজার অহম সেনাবাহিনীর সম্মুখীন হন লাচিত। তিনি “ট্রেঞ্চ” খুড়ে লড়াই শুরু করেন এবং ১০ হাজার অহম সেনা মাতৃভূমির জন্য প্রাণ দেয়।
- মার্চ ১৬৭০ সালে শায়েস্তা খান রাম সিং এর সঙ্গে যোগ দেয়। লাচিত অবস্থা অপরিবর্তিত রেখে নৌযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। ফেব্রুয়ারিতে মুঘল সেনা “আন্ধারুবালি” পর্যন্ত এগিয়ে আসে।
- ১৬৭১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে লাচিত ৬টি জাহাজ নিয়ে ৩৮টি মুঘল জাহাজের উপর আক্রমণ শুরু করেন। সফলভাবে মুঘল নৌ বন্দুক থেকে সুরক্ষা পান অহম সেনা।
- লাচিত ও তাঁর সৈন্যবাহিনী ব্রহ্মপুত্র নদীর জলক্রম এবং বায়ুপ্রবাহে বৈচিত্র্য নিয়ে দখলদারদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন। তাদের ২১টি জাহাজ ধ্বংস হয় এবং অনেক সৈন্য মারা যায়।
- লাচিত তাড়িয়ে নিয়ে যান ব্রহ্মপুত্র থেকে মানস নদী পর্যন্ত। শেষে রাম সিং ৭ এপ্রিল ১৬৭১ সালে হেরে গিয়ে আসাম থেকে পালিয়েছেন। মাত্র ২০০০ অহম নৌবাহিনীর সঙ্গে লাচিত বরফুকন ৯০০০ মুঘল নৌবাহিনীকে পরাস্ত করেন।
- লাচিত বরফুকন ইতিহাসের পাতায় হলেও আসামের মানুষের হৃদয়ে তিনি একজন অকৃত্রিম বীর হিসেবেই চিরকাল থাকবেন। প্রতি বছর ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমী থেকে পাস করা সেরা ক্যাডেটদের “লাচিত বরফুকন গোল্ড মেডেল” দেওয়ার মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়।
- লাচিত বরফুকনের নামের স্মৃতি আসামার প্রতিটি মানুষের মধ্যে চিরকাল বিদ্যমান থাকবে। আসামবাসী কোন ইসলামী ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না।
- ভারতের ইতিহাসকে ভুলভাবে লেখার জন্য কিছু কমিউনিস্ট ঐতিহাসিকদের প্রতি রইল ঘৃণা ও ধিক্কার।
You can download the লাচিত বরফুকন রচনা বাংলা PDF / Lachit Borphukan Essay in Bengali PDF by using the link given below.